জুলাই ২, ২০২০
দেবহাটায় ইজিবাইক চালক হত্যায় দায় স্বীকার করে স্ত্রী ও পরকিয়া প্রেমিকের জবানবন্দি
দেবহাটা প্রতিনিধি : দেবহাটায় চাঞ্চল্যকর ইজিবাইক চালক হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে দুই আসামি। বৃহষ্পতিবার (২ জুলাই) সাতক্ষীরার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাস মন্ডলের কাছে নিহত ইজিবাইক চালক মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ও রাবেয়ার প্রেমিক উপজেলার কামটা গ্রামের ওহাব সরদারের ছেলে সাইদুর রহমান রাজু পৃথক পৃথক ভাবে ১৬৪ ধারা মতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে কেন, কি কারণে, কোথায় আর কীভাবে মনিরুলকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে তার প্রকাশ পেয়েছে। মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়ার সাথে রাজুর অবৈধ সম্পর্কের কারণে তারা উভয়ে পরিকল্পনা করে মনিরুলকে হত্যা করেছে বলে তারা আদালতকে জানিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবহাটা থানার ওসি (তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র জানান, মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জানিয়েছে, মনিরুলের বন্ধু রাজু তাদের বাড়িতে আসা যাওয়ার সূত্র ধরে তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হলে রাজু রাবেয়াকে বিয়ে করার কথা বলে। কিন্তু রাবেয়া তার স্বামী থাকতে তার সাথে বিয়ে করা সম্ভব নয় জানায়। গত ২৫ জুন ভোরে সাংসারিক বিরোধে মনিরুল রাবেয়াকে মারপিট করলে সকাল ১০ টার দিকে রাবেয়া রাজুর কাছে গাজীরহাট বাজারে যেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মনিরুল কর্তৃক তাকে মারপিটের কথা জানায়। এতে রাজু প্রচন্ড রেগে গিয়ে ওই দিনই মনিরুলকে হত্যা করার কথা জানায়। পরে তাদের পরিকল্পনা মতো রাজু সন্ধ্যার সময় রাবেয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে মনিরুলের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে দেবহাটায় যেয়ে মনিরুলকে হত্যা করে। এছাড়া সাইদুর রহমান রাজু তার ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে বলেছে, রমজান নামে একজনকে সাথে নিয়ে সে দেবহাটাতে আসে। রমজান মনিরুলের ইজিবাইকে যায় আর রাজু মোটর সাইকেলে করে দেবহাটায় যেয়ে বৌদির দোকানের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আগে থেকে রাজু দড়ি কিনে কাছে রেখে দেয়। পরে তারা এক হয়ে মনিরুলের ইজিবাইকে সখিপুরের দিকে আসার সময় সখিপুরের চাতালের কাছে এসে পিছন দিক থেকে দড়ির ফাঁস দিয়ে ২ জনে মিলে জোরে টান দেয়। এতে মনিরুল হাত পা ছোটাছুটি করতে থাকলে এক পর্যায়ে হাত পা নিথর হয়ে পড়লে রাজু ইজিবাইক থেকে দ্রæত নেমে সখিপুরের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি ব্যাটারি ভ্যানে করে সখিপুরে চলে যায়। সখিপুর মোড় থেকে সে মোটর সাইকেলে গাজীরহাট চলে যায়। যাওয়ার সময় রাজু রমজানকে বলে যায়, যেহেতু এলাকাটা তার তাই লোকজন তাকে চিনে ফেলতে পারে। রমজান যা পারে তাই করে দ্রæত এলাকা ত্যাগ করার কথা বলে। পরে রমজান মনিরুলের লাশটা রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। ওসি (তদন্ত) বলেন, মামলার তদন্ত এখনও চলমান। যতটুকু ক্লু উদ্ঘাটন করা হয়েছে তার থেকে প্রতীয়মান হত্যাটি প্রেমঘটিত কারণে পূর্ব পরিকল্পিত। তবে তদন্ত এখনও অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৬ জুন) ভোরে দেবহাটা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের ইসমাঈল গাজীর ছেলে ইজিবাইক চালক মনিরুল ইসলাম (৩৩) এর লাশ উদ্ধার করে দেবহাটা থানা পুলিশ। শুক্রবার রাত ৯.১০ মিনিটের দিকে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও হত্যার ঘটনার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)। 8,471,523 total views, 3,139 views today |
|
|
|